ইয়াসির আরাফাত
মডার্ন স্কাইস্ক্রেপার বলতে আমরা যা বুঝি, আধুনিক কালে এর প্রথম উদাহরণ নির্মিত হয় আমেরিকার শিকাগো শহরে, ১৮৮৫ সালে। এর উচ্চতা ছিল ৪২ মিটার বা ১৩৮ ফুট। এই শিকাগোই ছিল প্রথম শহর, যারা পরিকল্পিতভাবে তাদের ফিন্যান্সিয়াল ডিস্ট্রিক্ট গঠন করে গগনচুম্বী অট্টালিকায়। এরপর শিকাগোকে অনুসরণ করে আমেরিকার আরেকটি শহর, নিউইয়র্ক।
১৮৮৪ থেকে ১৯৪৫ সাল পর্যন্ত আমেরিকার অর্থনৈতিক উন্নয়ন, শহরে বসবাসরত জনসংখ্যার বৃদ্ধি এবং আধুনিক প্রযুক্তির আবিষ্কার—এই সবকিছুর সমন্বয় ঘটাতে আমেরিকায় শুরু হয় আকাশছোঁয়া ভবনের নির্মাণকাজ।
কিন্তু সত্যিকার অর্থে ইতিহাসের প্রথম আকাশছোঁয়া ভবন তৈরি হয়েছিল আরও অনেক আগে, ইয়েমেনে। ১৩৮ বছর আগে আমেরিকায় নির্মিত প্রথম আধুনিক স্কাইস্ক্রেপার তৈরি হওয়ারও ৮০০ থেকে ৯০০ বছর আগে ইয়েমেনের মানুষ তৈরি করেছিল ইতিহাসের প্রথম ৮ থেকে ১০ তলা ভবন, যেগুলোকে বলা হয়ে থাকে ইতিহাসের প্রথম ম্যানহাটান। ইয়েমেনে গিয়ে সেই স্কাইস্ক্রেপার শহরগুলো দেখতে না পারলেও সৌদি আরবে গিয়ে দেখে এলাম তার কিছু নমুনা। দেশটির সে জায়গাটি অবস্থিত আবহা অঞ্চলে রিজাল আলমা নামের গ্রামে। সৌদি আরবের এই আবহা অঞ্চল হচ্ছে ইয়েমেনের সীমান্তবর্তী এবং এই অঞ্চলগুলো কয়েক শ বছর আগে মূলত ইয়েমেনেরই অংশ ছিল। এ কারণে ইয়েমেনের অন্যান্য শহরের মতো এই রিজাল আলমাতেও দেখা যায় প্রাচীন উঁচু ভবনের নমুনা।
প্রায় ৯০০ বছর আগে তৈরি করা ৬০টি উঁচু ভবন রয়েছে রিজাল আলমা গ্রামে। এর কিছু ভবন ৮ তলা পর্যন্ত উঁচু। ঐতিহাসিক দৃষ্টিকোণ থেকে জায়গাটি সৌদি আরবের জন্য বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ। কয়েক বছর আগে এই জায়গাকে পর্যটকবান্ধব করে সাজানোর কাজ শুরু হয়।
আনুমানিক ৯০০ বছর আগে আবহা অঞ্চলের রিজাল আলমা গ্রামের বাসিন্দারা এমন বহুতল ভবন নির্মাণে সক্ষম হয়েছিল। সে কারণে একে বলা হয় ইতিহাসের প্রথম ম্যানহাটান।
আনুমানিক ৯০০ বছর আগে আবহা অঞ্চলের রিজাল আলমা গ্রামের বাসিন্দারা এমন বহুতল ভবন নির্মাণে সক্ষম হয়েছিল। সে কারণে একে বলা হয় ইতিহাসের প্রথম ম্যানহাটান।
এরই অংশ হিসেবে রিজাল আলমা গ্রামটি এখন ওপেন এয়ার মিউজিয়ামে পরিণত হয়েছে। ঐতিহাসিক গুরুত্ব এবং অভিনব ভবন নির্মাণশৈলীর কারণে ২০১৮ সালে জায়গাটি ইউনেসকো ওয়ার্ল্ড হেরিটেজের স্বীকৃতি অর্জন করে।
বর্তমানে রিজাল আলমা গ্রামটি সৌদি আরবের পর্যটনশিল্পে গুরুত্বপূর্ণ জায়গা করে নিয়েছে। আবহা এলাকায় গেলে আমার রেকমেন্ডেশন থাকবে রিজাল আলমা গ্রামটিতে যাওয়ার। সেখানে শুধু সেই প্রাচীন গ্রাম ও ভবনই নেই; সেই সঙ্গে আছে সুন্দর সাজানো রাস্তা আর প্যানারোমিক ল্যান্ডস্কেপ। এই দুটি দেখার জন্য একবার হলেও আবহা যাওয়া যায়। শুধু তা-ই নয়, এই অঞ্চলের পরিবেশ সৌদি আরবের অন্য যেকোনো অঞ্চলের তুলনায় অনেক বেশি সবুজ। আবহা দেখলে বিশ্বাস করা কঠিন, মরুভূমির রুক্ষতার বাইরেও সৌদি আরবের আর একটা রূপ আছে
পাঠকের মতামত